প্রকাশের চার ঘণ্টা পর প্রাথমিক বৃত্তির ফল স্থগিত

প্রকাশের চার ঘণ্টার পর প্রাথমিক বৃত্তির ফল স্থগিত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় ফল প্রকাশ করা হয়। পরে বিকেল পৌনে ৫টায় সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ই-মেইল পাঠিয়ে ফল স্থগিত করা হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সব প্রধান শিক্ষকদের জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে প্রাথমিকের বৃত্তির ফল স্থগিত করা হয়েছে বলে সন্ধ্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সময়ের আলোকে এ তথ্য জানান।

জাকির হোসেন বলেন, বৃত্তির ফলাফল অপরির্তীত থাকবে। কোনো হেরফের হবে না। যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে পুরো রেজাল্ট প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, যারা বৃত্তি পেয়েছে, তারাই বৃত্তি পাবে। বুধবার (আজ) দিনের যেকোন সময় বৃত্তির ফল প্রকাশ করা হবে।

এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ফল প্রকাশ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তখন তিনি জানান, এবার ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) ৩৩ হাজার জন এবং ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ জনকে এবার বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ২২৫ টাকা করে পাবে। তাছাড়া উভয় ধরনের বৃত্তিপ্রাপ্তদের প্রতি বছর ২২৫ টাকা করে এককালীন দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, উপজেলা বা থানায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা বা থানা কোটা নির্ধারণ করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বণ্টন করা হয়। সাধারণ বৃত্তি বিতরণ করা হয় ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক।

এ বছর সাধারণ গ্রেডে বৃত্তির ক্ষেত্রে ৮ হাজার ১৪৫টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ছয়টি (৩ জন ছাত্র এবং ৩জন ছাত্রী) হিসেবে ৪৮ হাজার ৮৭০টি এবং বাকি ৬৩০টি বৃত্তি থেকে প্রতিটি উপজেলা/থানায় একটি করে ৫১৩টি উপজেলা/থানায় ৫১৩টি সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রাখা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারা কারা সরকারি বৃত্তি পাবে, তা নির্ধারণে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা হয়। সারা দেশের ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

এভাবে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হত এক যুগ আগে। ২০০৯ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) শুরু হওয়ার পর আলাদা বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিক সমাপনীর ফলের ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া শুরু হয়। মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা হয়নি। পরে জানানো হয়, নতুন শিক্ষাক্রম যেহেতু চালু হচ্ছে, সেহেতু সমাপনী পরীক্ষা আর নেওয়া হবে না। এ পরিস্থিতিতে প্রাথমিকে মেধা বৃত্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে ২০২২ সালের শেষে আবারও আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে আরও দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট তিনটি বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়োগে যেহেতু সময়ক্ষেপণ হয় সেহেতু আমরা বিভাগভিত্তিক ক্লাস্টার পদ্ধতিতে এগোচ্ছি। এ পদ্ধতিতে ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের প্ল্যান নিয়ে বুয়েটের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। একসঙ্গে একটি বা দুটি বিভাগ ক্লাস্টার করলে বুয়েট ছয় মাসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। যে বিভাগে শূন্যপদ বেশি থাকবে সে বিভাগে আগে ক্লাস্টার করা হবে।

গণশিক্ষা সচিব আরও বলেন, এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। সারাদেশে একযোগে নিয়োগ পরীক্ষার পরিবর্তে আট বিভাগকে চার ভাগে বিভক্ত করে আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত শিক্ষক পদ শূন্য হচ্ছে। শূন্যপদ পূরণে প্রতিবছর অন্তত দুটি করে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একসঙ্গে অনেক শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে না। বিভাগভিত্তিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যেসব বিভাগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, তাতে শুধু সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

তিনি জানান, আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের যোগাযোগ আশানুরূপ হয়েছে। আশা করছি একমাসের মধ্যে শিক্ষার্থীরা বকেয়া উপবৃত্তির টাকা পেয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *