প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা

 

স্টাফ রিপোর্টার

মৎস্য আইনে জাটকা আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মওজুদ পরিবহন নিষিদ্ধ থাকলেও চাঁদপুর মাছঘাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের পোনা জাটকা।

গত দুদিন ধরে মাছঘাটের বেশ কয়েকটি আড়তের সামনে হাকডাক দিয়ে জাটকা বিক্রি করতে দেখাগেছে।
আড়তে কিছু সময় অপেক্ষা করে দেখোগেছে জাটকা বিক্রির জন্য আড়ৎগুলোর সামনে বস্তা থেকে বের করে স্তুপ করা হচ্ছে। আবার অনেকেই জাটকাগুলো বাছাই করে আলাদা করছেন।
চাঁদপুর মৎস্য বিভাগ থেকে জাটকা সম্পর্কে জানাগেছে, ১০ইঞ্চির নীচের সাইজের ইলিশকে জাটকা বলে গণ্য করা হয়। ১০ ইঞ্চির ওপরের সাইজের ইলিশ বিক্রিতে কোন প্রকার বাঁধা নেই। আর এসব জাটকা ইলিশ প্রতিবছর নভেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ধরা নিষিদ্ধ। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনাসহ অভয়াশ্রম এলাকায় যেমন জাটকা ধরা নিষিদ্ধ, ঠিক তেমনেই এই সময়ও নিষিদ্ধ। এই বিষয়ে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী ও সর্বসাধারনের অবগতির জন্য মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা।

চাঁদপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জাটকা বিক্রি সম্পর্কে বলেন, জাটকা ধরা, পরিবহন ও বিক্রি যেন না করতে পারে এই বিষয়ে আমরা খুবই তৎপর। পরিবহন থেকে জাটকা

যেন বাজারে না আসতে পারে তার জন্য আগেই সরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে। যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রলার ও অন্যান্য নৌযান থেকেই কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ জাটকা আটক করছে এবং করবে। আমরা পরিকল্পনা করছি

জাটকার জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য। আমাদের উচিৎ ইলিশ মাছ বড় হওয়ার সুযোগ দেয়া। কারণ ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ।

১ নভেম্বর থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে জাটকা (বাচ্চা ইলিশ) আহরণ, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা। চলবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।

অপরাধ বিবেচনায় জাটকার আগের মাপ ১০ ইঞ্চিই নির্ধারিত রয়েছে।

এদিকে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালীন ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে এই চার মাস প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দেবে সরকার। এছাড়া সারাদেশে জাটকা নিধন বন্ধে অভিযান ও

ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

এর আগে গত ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা মাছ সংরক্ষণে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। তার আগে পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দু’মাস ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।

মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জাটকা ধরার নিষিদ্ধ সময়ে বিশেষ অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত চলবে। মন্ত্রণালয়ের

পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলে পরিবারকে চার মাস ৪০ কেজি হারে ভিজিএফের চাল বিতরণসহ বেশকিছু কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার উপ-প্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, বাংলাদেশের মৎস্য আইন অনুযায়ী বহু আগে জাটকার আকার ছিল নয় ইঞ্চি। কিন্তু ২০১৪ সালে গেজেট সংশোধন করে জাটকার মাপ ১০ ইঞ্চি

নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর আর পরিবর্তন হয়নি। মুখ থেকে লেজ পর্যন্ত ইলিশের এই মাপ হিসাব করা হয়।

তিনি বলেন, জাটকা ধরা নিয়ে নতুন করে কোনো প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়নি। সব সময়ের জন্য ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস সারা দেশে জাটকা ধরা নিষেধ। এটার জন্য প্রতিবছর আমাদের কোনো নোটিশ বা

গেজেটের প্রয়োজন হয় না। তবে এ সময়ে আমরা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করব। শিগগিরই অভিযান পরিচালনার জন্য সব জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালীন ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে এই চার মাস জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হবে। এরপর মার্চ ও এপ্রিল এই দুইমাস দেশের ৬টি অভয়আশ্রমে জাটকা বিচরণ ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের মাছ ধরা নিষেধ থাকবে। আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে। দেশের যে সব স্থানে জাটকার বিচরণ বেশি, সে সব জায়গায় অভিযানও বেশি পরিচালনা করা হবে। এছাড়া

‘জাটকা ধরা, মজুত ও হাট-বাজারে বিক্রি করা যাবে না’- এটা সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য। তবে অভিযানের বিষয়টা একটু ভিন্ন, যেখানে আমাদের নদী আছে, জাটকা বড় হচ্ছে সে সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা

করা হবে।

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ১০ ইঞ্চির ছোট সব ইলিশ (জাটকা) ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, বিনিময় ও মজুত আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ সময় নদীতে ব্যবহারের জন্য জেলেদের জালের ব্যাস বা ফাঁসের গিঁটের দূরত্ব সাড়ে পাঁচ সেন্টিমিটারের চাইতে কম হলে জেল-জরিমানার বিধান আছে। এছাড়া মৎস্য অধিদপ্তর স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে জেলেদের মধ্যে জাটকা না ধরার উপকারিতা সম্পর্কে গণসচেতনতা চালানো হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগ মিলে সমন্বিত অভিযান চালানো হবে।
বাংলাদেশে সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন। ওই উৎপাদন এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টনের মতো। সরকারের লক্ষ্য আগামী দু’বছরের মধ্যে উৎপাদন ৭ লাখ টনে উন্নীত করা। বাংলাদেশ এখন ইলিশ উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *