স্টাফ রিপোর্টার ॥ শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছে প্রথম দফায় ২৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ। ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। করোনাভীতি উপেক্ষা করে ভোট দিতে সকাল থেকে নারী-পুরুষদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে দু’একটি কেন্দ্রে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাংচুরের মতো বিছিন্ন ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে তৃণমূলে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পেরে ভোটাররা খুশি। তারা জানান, ব্যালট পেপারের চেয়ে ইভিএমে সহজেই ভোট দেয়া যায়। ভোট কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার মোতায়েন ছিল। ছিল র্যাব ও বিজিবির টহল। প্রত্যেক কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের ভিড়ে সারাক্ষণই ছিল সাজ সাজ রব।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত প্রথম দফায় দেশের ২৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করা হয়। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য ইসির পক্ষ থেকে আগে থেকে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। এর মধ্যেও কিন্তু পৌরসভায় এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ অনিয়মের অভিযোগ এনে কয়েক প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এই অভিযোগে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর পৌরসভার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মাহমুদুল হাসান সজল। ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের বের করে দেয়া, দলীয় নেতাকর্মীদের মারপিটসহ নানা অভিযোগ এনে বিকেল ৩টার দিকে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বলেন, এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। শাহজাদপুরে কোন কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। নির্বাচনের আগে থেকেই আমাকে ও নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগাতে দেয়া হয়নি।
ঢাকার ধামরাই বিএনপি মেয়র পদপ্রার্থী দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু ভোট বর্জন করে বলেন, ইভিএমে টিপ দিলে বিএনপির প্রতীক দেখায় না। অধিকাংশ কেন্দ্রেই এ অবস্থা। যে কেন্দ্রে ঢুকছি সেটার মধ্যেই ধানের শীষের প্রতীক নেই। এ রকম আট থেকে ১০ কেন্দ্রের মধ্যে প্রতীক নেই। এ সময় তিনি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বলেন, সরকারের প্রহসনের নির্বাচন এইটা।
এদিকে পাবনার চাটমোহর পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর দুই ঘণ্টা পরই কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। ভোট বর্জন করা দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মির্জা রেজাউল করিম এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সম্পাদক আবদুল মান্নান। এছাড়া খুলনার চালনায় বিএনপির প্রার্থীর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
পঞ্চগড় পৌরসভা নির্বাচনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আলমগীরের গাড়ি ভাংচুর করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এছাড়া এই পৌরসভায় নির্বাচন চলাকালে সকাল ৯টার দিকে শহরের পঞ্চগড় সরকারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এর বাইরের বেশিরভাগ পৌরসভায় নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোন দলের প্রার্থীও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেননি। নির্বাচন হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ পরিবেশে। এমনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে এজেন্ট বের করে দেয়ার কোন অভিযোগ ছিল না। তবে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও কোন কোন পৌরসভার ভোট নিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে আঙ্গুলের ছাপ না মেলা, বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো কিছু অভিযোগ ছিল। নির্বাচনের শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। ফলে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কুড়িগ্রাম ॥ বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করায় একটি কেন্দ্র থেকে ৩ জন পোলিং এজেন্টকে প্রত্যাহার করে নেন জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং অফিসার। এছাড়াও কয়েকটি কক্ষে নিরাপত্তাহীনতায় মেয়র প্রার্থীদের এজেন্ট কাউকে কিছু না বলে সটকে পড়েছেন।
শৈত্যপ্রবাহের কারণে আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় বেশিরভাগ কেন্দ্রে প্রায় অন্ধকার বুথে ভোটারদের ভোট দিতে ভোগান্তির অভিযোগ করা হয়। এছাড়াও ইভিএমে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয় ভোটারদের। তবে বেশিরভাগ ভোটার উচ্ছ্বসিতভাবে জানান, এটি একটি সহজ পদ্ধতি। ভোট দিতে কোন সমস্যা হয়নি।
দুপুর ২টার মধ্যে প্রায় ৪৫ ভাগ ভোট সম্পন্ন হয়। ভোটাগ্রহণকালে ছোটখাটো অভিযোগ ছাড়া বড় ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। করিমের খামার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশরাফিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ কেন্দ্রে কিছু পোলিং এজেন্ট সরকারী দলের পক্ষে ভোটদানে সহযোগিতা করার অভিযোগ ওঠে। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ৪/৫টি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিশ্চিত করার পর সরকার দলের কর্মীরা নিজেরাই জোরপূর্বক গোপন বুথে গিয়ে ভোটদান করে। এ রকম ঘটনা কম-বেশি সব কেন্দ্রেই ঘটেছে। জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তুচ্ছ দু’একটি ঘটনা ছাড়া আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। কোন ধরনের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও ভোট জালিয়াতির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ঠাকুরগাঁও ॥ কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরসভায় উৎসব-মুখর পরিবেশে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শীতের তীব্রতার কারণে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ভোটাররা জানান, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সহজভাবে ইভিএম দিতে পেরে তাদের ভাল লেগেছে। অন্যদিকে ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান। এছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনছারসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা ভূমি কমিশনার কামরুল হাসান সোহাগ জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে কোথাও কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে থাকা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য কিছুটা বিলম্ব হলেও এখানে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি।
নেত্রকোনা ॥ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সোমবার (প্রথম ধাপে) নেত্রকোনার মদন পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯টি কেন্দ্রের কোথাও কোন গোলযোগ হয়নি। ভোটারদের উপস্থিতির কারণে কোন কোন কেন্দ্রে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে। সারাদিনই ভোটারদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে কেন্দ্রগুলোতে। তবে শুরুর দিকে নারী ভোটারদের এবং বেলা ১২টার পর থেকে পুরুষ ভোটারদের বেশি উপস্থিতি ছিল। তারা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। ভোট চলাকালে প্রার্থীদের কেউ কোন ধরনের অভিযোগ তেুালেননি। পাওয়া যায়নি জাল ভোটের অভিযোগও। এদিকে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে কিছুটা সংশয় থাকলেও ভোট দিতে গিয়ে ভোটারদের কোন অসুবিধা হয়নি। জাহাঙ্গীরপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসা ৮ নং ওয়ার্ডের নারী ভোটার শামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘নতুন সিস্টেমে ভোট দিতাম পারবাম কি-না তা নিয়া একটু দ্বিধা আছিল। কিন্তু কেন্দ্রে গিয়া দেখি খুবই সহজ। কোন অসুবিধা হয় নাই।
বরিশাল ॥ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপে উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এবার এ দুটি পৌরসভায় প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। সরেজমিনে পৌর এলাকার বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের চিত্র। বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের তুলনায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সকাল থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে বড়ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) ॥ জেলার প্রথম সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলে বেলা গড়ার সঙ্গে কাউন্সিলর প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া রূপ নেয় ককটেল বিস্ফোরণ, ইভিএম ভাংচুরের মতো ঘটনায়। সোমবার দিনভর সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ফয়সাল নামে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টসহ পাঁচ কর্মী।