৫৯টি জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথ: রিজার্ভের টাকা মানুষের কল্যাণে খরচ করেছি: প্রধানমন্ত্রী

রিজার্ভের টাকা দেশের মানুষের জন্য খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৫৯টি জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি যে বর্তমানে একটা কথা আসছে- রিজার্ভ, রিজার্ভ, রিজার্ভ, রিজার্ভ নাই। রিজার্ভের টাকা নাকি সব চুরি হয়ে গেছে। আমরা ৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তার আগে বিএনপি ছিল। রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৬ বা ৯ বিলিয়ন ডলার। আর ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ছিল। এই ৫ বিলিয়ন রিজার্ভ থেকে আমরা প্রায় ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি উঠাতে পারি। রিজার্ভের টাকা তো সব সময় খরচ হতে থাকে, এটা রোলিং করে। কারণ করোনার সময় যোগাযোগ বন্ধ, আমদানি, রপ্তানি বন্ধ, যেতেও পারে না আসতেও পারে না। এই অবস্থা ছিল কোনো আমদানি হয়নি, এই কারণেই কিন্তু রিজার্ভ জমা হয়। যখন করোনা শেষ হয়ে যায় তখন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, ইন্ডাস্ট্রিজ তৈরির ক্ষেত্রে এমনকি চাষবাসের জন্য যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা, সেগুলোর জন্য আমাদের টাকা খরচ করতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যে ভ্যাকসিন কিনে এনেছি, ভ্যাকসিন যখন তৈরি হচ্ছে তখনই আমি ১২শ কোটি টাকা জমা দিয়েছি। কারণ যে ভ্যাকসিনই সফল হবে সেটা আমি আগে নেবো। আমার দেশের মানুষকে বাঁচাব। শুধু ভ্যাকসিন দিলে তো হয় না ভ্যাকসিন দিতে সিরিঞ্জ লাগে, অনেক কিছুই লাগে। প্লেন পাঠিয়ে বিদেশ থেকে আনিয়েছি। তাতে টাকা খরচ হয়েছে। এভাবে কিন্তু আমরা এ টাকা ব্যবহার করেছি মানুষের কল্যাণে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা যেতে না যেতেই শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, তারপরে স্যাংশন। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম সারাবিশ্বে বেড়ে গেছে। চাল, গম, জ্বালানি, ভোজ্যতেল সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। শুধু জিনিসের দাম বেড়েছে তা নয়, তার সাথে পরিবহন খরচও বেড়েছে। ২শ ডলারে আমরা যে গম কিনতাম সেটা এখন ৫শ ডলারে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে পারি না। যেখানে যত দামই লাগুক আমরা কিন্তু কিনে আনছি, মানুষকে দিচ্ছি। ৫০ লাখ মানুষের কাছে মাত্র ১৫ টাকায় আমরা চাল সরবরাহ করছি, আর যারা একেবারেই অপারগ তাদেরকে তো বিনাপয়সায় খাবার দিচ্ছি, ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। ৮ বিলিয়ন ডলার আমরা আলাদাভাবে বিনিয়োগ করেছি। বিমান সব ঝরঝরে অবস্থায় ছিল, সব থেকে আধুনিক বিমান আমরা কিনেছি। এখানে কিন্তু আমরা রিজার্ভের টাকা দিয়েই করেছি অন্যের টাকা ধার নিইনি। কারণ সেখানে ধার নিলে সুাদসহ শোধ দিতে হতো । বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই নিয়ে কিনেছি. এখন বিমান আমাদের টাকা শোধ দিচ্ছে দুই পার্সেন্ট ইন্টারেস্টসহ আমরা টাকা ফেরত পাচ্ছি । আমাদের রপ্তানি সেখানেও আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি, সেখানে আমরা টাকা দিচ্ছি । রপ্তানি থেকে আমাদের লোকই লাভবান হচ্ছে। এভাবে আমরা ৮ বিলিয়ন খরচ করেছি এবং এখন যেমন অতি বেশি মূল্য দিয়ে খাদ্য কিনতে হচ্ছে, তেল, গ্যাস কিনতে হচ্ছে। ভোজ্য তেল জ্বালানি তেল গম, ভুট্টা সবই আনতে হচ্ছে। টাকা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। এখানে আমার দেশের মানুষের জন্য খরচ করতে হবে।

আজকে যারা এটা নিয়ে কথা বলেন যে রিজার্ভ গেল কোথায়, তাদের জন্য একটু বলতে চাই, বিএনপির নেতা তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে কেন? কারণ অর্থপাচার মামলায় সাজা হয়েছে। আর এই অর্থ পাচার মামলা কিন্তু আমাদের আবিষ্কার না, এটা করেছে আমেরিকা এবং আমেরিকার লোকজন এফবিআই বাংলাদেশে এসে তার নামে সাক্ষী দিয়ে গেছে এবং সেই মানিলন্ডারিং কেসে তার সাত বছরের সাজা এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আসামি একটি দলের নেতা হয় কী করে। এই গ্রেনেড হামলা নিয়েও তারা অপপ্রচার চালিয়েছে। এদের চরিত্র অপপ্রচার চালানো। এখানে মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়।

খালেদা জিয়া, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে ট্রাস্ট করে সেখানে ফান্ড পেয়েছে, বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। একটা টাকা কোনো এতিম পায়নি, কেউ পায়নি। সব টাকা তার ব্যাংকে জমা। সেই কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা আর সেই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। তারপরেই তো তার বোন আসছে আমার কাছে ভাই আসছে বোনের স্বামী আসছে তাদের অনুরোধে তার সাজাটা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে আমি তার বাসায় থাকতে দিয়েছি। কিন্তু এখানে আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমার মা-বাবা ভাই সব হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত এটাই স্পষ্ট। গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আমাদের নেতাকর্মী হত্যায় তারেক, খালেদা জিয়া সব জড়িত। আমরা কিন্তু মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিতে যাইনি।

২০০১ সালের পর আমাদের নেতাকর্মীরা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওভাবে কিন্তু আমরা কারো ওপর নির্যাতন করিনি। আমি তাকে যেখানে এভাবে সুযোগ দিয়েছি অথচ তিনি কীভাবে আচরণ করেছেন আমার সঙ্গে। তার ছেলে কোকো যে টাকা পাচার করেছিল, কোকোর টাকা কিন্তু আমরা কিছু অংশ ফেরত আনতে পেরেছি। তারেক আর কত টাকা পাচার করেছে, কোকো মারা গেছে, তারেকের সাজা হয়েছে, তারাই আবার অর্থ পাচারের কথা বলে কোনো মুখে। মারা যাওয়ার পর আমি সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলাম। দুঃখের কথা বলে যাই, সবকিছু ভুলে সন্তান হারা মা ঠিক আছে আমি যাই, একটা সান্ত্বনা দিয়ে আসি। আমাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না দরজা বন্ধ। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাকে কত অপমান করেছেন আপনারা ভেবে দেখেন। তারপরও আমি তার প্রতি দয়া দেখিয়েছি, তার বাড়িতে তাকে থাকতে দিয়েছি কারণ আমরা তো তাদের মতো অত ছোট মন নিয়ে আসেনি। এরা নানা রকম অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *