বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া : শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘায় মুগ্ধ পর্যটক

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে দেখা মিলেছে নেপাল এবং ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপ। আকাশ পরিষ্কার থাকায় গত কয়েকদিন ধরেই মাঝে মধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে এটি। ফলে খালি চোখেই হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখে বিমোহিত হচ্ছেন পর্যটকরা।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকালে সূর্য ওঠার পর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিয়েছে। সূর্যকিরণের তেজ বৃদ্ধির সঙ্গে পর্বতটি আরো স্পষ্টভাবে ধরা পড়তে শুরু করে পর্যটকদের চোখে। আকাশে মেঘ না থাকায় এদিন সকালে বেশ ভালোভাবেই দৃশ্যমান ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। তারপর সময় গড়ানোর সঙ্গে ঝাপসা হয়ে যায় এটি।

 

তেঁতুলিয়া থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে হলেও প্রতিবছর শীতের আগে আগে এখান থেকে মেঘমুক্ত নীলাকাশের নিচে দেখা যায় তুষারাচ্ছাদিত শ্বেতশুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। মেঘ আর কুয়াশামুক্ত উত্তর-পশ্চিম আকাশে তাকালে মনে হবে চোখের সামনেই সাদা পাহাড়। বিশেষ করে ভোরের আকাশে বরফ আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম পর্বতটি দেখা বেশ উপভোগ্য। কখনও তা রুপালি চকচকে রূপ ধারণ করে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহরের টাইগার হিলে ভিড় করেন। পর্বতটির চূড়া দেখার সবচেয়ে জুতসই জায়গা সেটি। কেউ কেউ সান্দাকপু বা ফালুট যান। অনেকে সরাসরি নেপালে গিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অবলোকনের উত্তম জায়গা হলো তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর পারের ডাকবাংলো ও পিকনিক কর্ণার। ফলে আশেপাশের জেলা ও দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসছেন এখানে। তেঁতুলিয়া থেকে চোখের সামনে এই অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন তারা।

বন্ধুদের সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ঢাকা থেকে এসছেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা খালি চোখে দেখা যায় জেনেছি। তবে নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য এবারই হলো। গত বছরও এসেছিলাম, আকাশ পরিস্কার না থাকায় দেখতে পাইনি। তবে এ বছর হতাশ হইনি। খুব ভালো লাগছে।‘

 

রাজশাহী থেকে আসা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য তিনদিন থেকে তেঁতুলিয়ায় অবস্থান করছি। গত দুইদিন দেখা না মিললেও আজকে স্পষ্ট কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপের দেখা পেলাম। সত্যি বলতে আমার এখানে আসা সার্থক হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, অক্টোবরের শুরু থেকে মাঝে মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে আকাশে মেঘ থাকায় অন্যান্য বছরের মত দিনভর দেখা যাচ্ছিল না পর্বতটি। ফলে অনেক পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘার না দেখার আফসোস নিয়েই ফিরে গেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার। সেখান থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গ ৭৫ কিলোমিটার, ভুটান ৬৪ কিলোমিটার, চীন ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিং ৫৮ কিলোমিটার ও শিলিগুড়ি ৮ কিলোমিটার।

বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া : শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘায় মুগ্ধ পর্যটক

 

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ উপভোগের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের আহ্বান করছে। পর্যটকরাও সাড়া দিয়ে আসছেন তেঁতুলিয়ায়। আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের তীর্থস্থান তেঁতুলিয়া মহানন্দার পাড়ের ডাকবাংলো প্রস্তুত রেখেছি। এখানে পর্যটকদের বসার জন্য গ্যালারী করা হয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা সহজে দেখার জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন রেস্ট হাউজ আমরা প্রস্তুত রেখেছি।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের ইনচার্জ সিরাজুল ইসলামের বলেন, তেঁতুলিয়া শান্তিপূর্ণ উপজেলা। তবুও পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে বেড়াতে পারেন সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *