বিশ্ব বাজারে যখন দাম কম ছিল, তখন দেশে জ্বালানির দাম কমানো হয়নি। তা হলে এখন বাড়ানো হলো কেন? জনমনে আগে জিজ্ঞাসা, দেশে নিত্যপণ্যের চড়া দামের মাঝে জ্বালানির দামও বাড়ল কী কারণে? এ অজুহাতে ভাড়া বাড়লেও ‘আমলাদের’ কোনো চিন্তা নেই। কারণ, তাদের সরকারি গাড়ি আছে পরিবহন নেতাদেরও বহন করার ব্যক্তিগত গাড়ি আছে, যা বেসরকারি।
কিন্তু মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত বিত্তহীনরা নিরুপায়। তাদের গণপরিবহন ছাড়া কোনো উপায় নেই। এমনকি ‘ঘন’ হয়ে মানে, ঠাসাঠাসি করে হলেও বাস-মিনিতে তাদের চড়তে হবে।
গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির সাথে সাথে গণমানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ যেন ‘মরণফাঁদ’ আর ভাড়া বাড়ানোর ফাঁদে পা না দিয়ে যেন কারো উপায় নেই। তা-ও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে অচল ছুতানাতায় এবং সম্পূর্ণ খোঁড়া অজুহাতে। আন্তর্জাতিক হিসেবে পরিবহন ভাড়া বাড়ানো যায় (যদি এতই জরুরি হয়) বড় জোর ৭ শতাংশ আগের তুলনায়; সরকার বলেছে, ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে আর বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। এ ক্ষেত্রে লাভের গুড়ের ওজন কেমন আর তা পিঁপড়ার খাওয়া সম্ভব কি না, সেটি সবার জানা।
অন্য দিকে, সরকারি সংস্থা বিপিসি চুটিয়ে নিকট অতীতে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেও বলছে, ‘আমাদের লোকসান হয়েছে।’ বাংলাদেশে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান সাধারণত লাভের মুখ দেখে না। সেখানে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি কম লাভ করেনি। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমলেও এ দেশে কমানো হয় না। তবে মাত্র ১ শতাংশ বাড়লে একই যুক্তিতে কয়েক গুণ বেশি বাড়াতে আর তর সয় না।
এ দিকে এবার পরিবহন ভাড়া অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়ানোর কয়েক দিন পর টিভির ব্রেকিং নিউজ : আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। গ্যাসের দাম কমেছে আরো অনেক বেশি। যে দিন পরিবহন নেতাদের সাথে প্রশাসনের নেতাদের চুক্তির সে সময়ে একজন পরিবহন নেতাকে সেখানে দেখে অনেকেই হতবাক! তিনি ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা এবং সম্প্রতি এ দলের নমিনেশন চেয়েছেন ইলেকশনে। অবশ্য নিজে সিলেকশনে বর্তমানে নেতা। সোজা কথা, চুক্তির টেবিলে দু’পক্ষেই ক্ষমতাসীন মহল। এ দু’ধারী তলোয়ার থেকে রেহাই পাওয়া সহজ নয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়? সর্বমোট ৫৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির উল্লেখ করা হয়েছে। কথা হলো, এর দায় গরিব সাধারণ মানুষকে কেন বেশি টানতে হবে? যারা এর ভোগকারী, তারা অর্থাৎ মালিকপক্ষেরই মূলত দায় নেয়া উচিত। তাদের তো কেবল লাভ আর লাভ। নিম্নবিত্ত মানুষের প্রতি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরাট দায়িত্ব থাকে। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে বলে দেশেও দাম বাড়াতে হলো। কিন্তু বিশ্বের বাজারে যখন তেলের দাম কমেছিল, তখন তো দাম কমেনি।
জ্বালানির বর্ধিত মূল্যের বিপুল অর্থ অন্য খাতে ভর্তুকি হিসেবে না দেয়াই উত্তম। কারণ এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। এর প্রধান শিকার সীমিত আয়ের মানুষজন।
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল