বৃষ্টি: এক নিয়ামত

ফাতেমা মাহফুজ

বৃষ্টি। পৃথিবীর জন্য আল্লাহর দেয়া এক অনেক বড় নিয়ামত। সূরা ফুরকানের ৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তিনি তাঁর (বৃষ্টিরূপী) রহমতের আগে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর আসমান থেকে (তার মাধ্যমে) বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন।’ এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি এবং বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে, বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ। বার্তাবাহক হিসেবে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার পর যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন প্রথমে বাতাসে ধূলিকণা থাকলেও অতঃপর বৃষ্টি থেকে আমরা বিশুদ্ধ পানি পাই। তবে অবশ্যই সরাসরি বৃষ্টির পানি হতে হবে। ঘরের চালের টিন ধোয়া কিংবা ধূলিকণা মিশ্রিত বালতিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ নয়। সেই সাথে রেডিওএক্টিভ অঞ্চল ও যেসব জায়গায় পাওয়ার প্ল্যান্ট, চুল্লি, পেপার মিল রয়েছে- সেসব জায়গার বৃষ্টির পানি দূষিত হয়। সুতরাং বৃষ্টির পানির বিশুদ্ধতা বেশ কিছু পরিবেশের ওপরও নির্ভর করে।

রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, ‘আর তিনিই আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে পরিচালিত করে, অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখণ্ডের দিকে, তারপর … আমি তা দিয়ে মৃত জমিনকে পুনরায় জীবিত করি’ (সূরা ফাতির-৯)।

এখানে বৃষ্টিকে জমিনের প্রাণ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমরা জানি, বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন মেজর ও মাইনর আয়ন যেমন-সোডিয়াম, পটাশিয়াম, কোরিন, ম্যাগনেশিয়াম, কোরাইড, বাইকার্বোনেট এবং সালফেট থাকে। সেই সাথে থাকে অ্যামোনিয়া, নাইট্রোজেন ও নাইট্রোজেনাস কম্পাউন্ড।
বৃষ্টি যখন হয় তখন মাটির ভেতর কিছু পরিবর্তন আসে। মাটিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন উৎপন্ন হয় যা গাছপালার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ লিয়ামল্যাপিং বলেন, ‘বৃষ্টির পানির পিএইচ পানির চেয়ে কম থাকে, যেটা উদ্ভিদের জন্য খুবই উত্তম।’ হ্যাঁ, আমরা জানি বৃষ্টির পানির পিএইচ ৫.৬ থেকে ৫.৮। আর পানির পিএইচ-৭। বৃষ্টির পানির নাইট্রেট গাছপালার উন্নয়ন ও সবুজ পত্রপল্লবের জন্য খুবই উপকারী।

সুতরাং, সূরা আর-রাহমানের সেই আয়াতই মনে পড়ে- ‘তোমরা তোমাদের রবের কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে।’ আমরা কি ভেবে দেখেছি, বৃষ্টি না হলে কী হবে? মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হবে, নদী-নালা, তথা পানির উৎস শুকিয়ে যাবে। জনজীবন হবে উৎকণ্ঠিত।

তবে হ্যাঁ অতিবৃষ্টি, এসিড বৃষ্টি (পিএইচের মাত্রা কমে গেলে), বন্যা- এগুলো সবই বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। আর আমাদের জন্য পরীাস্বরূপ। আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা: দমকা হাওয়া বইতে দেখলে উদ্বিগ্ন হয়ে যেতেন। তাঁর ভেতর একটা ভয় কাজ করত, কারণ নূহ আ:-এর অবাধ্য জাতি ওহুদ আ:-এর অহঙ্কারি জাতির ওপর বৃষ্টির মাধ্যমেই গজব নাজিল হয়েছিল। যে বৃষ্টি স্বস্তির ছিল না, ছিল শাস্তির। আট দিন সাত রাতের প্রবল বৃষ্টিতে হুদ আ:- এর জাতি বিধ্বস্ত হয়েছিল। অন্য দিকে, নূহ আ:-এর জালিম সম্প্রদায়ও প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে ধ্বংস হয়। তাই বৃষ্টি দেখলে রাসূলুল্লাহ সা: এই দোয়া করতেন- ‘হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও’ (সুনানে নাসায়ি)। সুতরাং, পৃথিবীর জন্য বৃষ্টি অনেক বড় নিয়ামত।

লেখক : প্রাবন্ধিক, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *