রেকর্ড গড়ার পর ভেঙে গেল বিটিএস

কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ কোরীয় ব্যান্ড বিটিএস নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল উত্তেজনা। তাদের নতুন গান মুক্তির পর শুরু হয়ে যায় রেকর্ড বই ঘাঁটাঘাঁটি। এবার কটি রেকর্ড ভাঙবে ব্যান্ডটি? বিটিএসকে স্বীকৃতির বিচারে এশিয়ার সেরা বললেও বাড়িয়ে বলা হয় না। গ্র্যামি থেকে বিলবোর্ড অ্যাওয়ার্ডস, জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে হোয়াইট হাউস—কোথায় পৌঁছায়নি তারা।
১৩ জুন ব্যান্ডটির জন্য বিশেষ একটি দিন। ঠিক ৯ বছর আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্যান্ডটির। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে ১০ জুন মুক্তি পেয়েছে ব্যান্ডটির নতুন অ্যালবাম প্রুফ। সংকলিত এই অ্যালবামে গান রয়েছে ২৮টি।
মুক্তির পর যথারীতি আলোচনার শীর্ষে চলে এসেছে অ্যালবামটি। প্রুফের টাইটেল ট্র্যাক ‘ইয়েট টু কাম’ গানটি ব্যান্ডের ৯ বছরের যাত্রাকে তুলে ধরে। গানটির মিউজিক ভিডিওতে বিটিএসের আগের গানগুলো থেকে নেওয়া বিভিন্ন দৃশ্যের অনুকরণও দেখানো হয়েছে। এই নতুন গান প্রকাশের পর তিন দিনে ইউটিউবে গানটির ভিউ ৭৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই রেকর্ড তিন মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
তবে নতুন অ্যালবামের এই সাফল্যের উদ্‌যাপন মধ্যেই ভক্তদের মন খারাপ করা খবর দিল ব্যান্ডটি। প্রতিষ্ঠার নয় বছর পর ভেঙে যাচ্ছে বিটিএস! খবর এএফপির।

গত মঙ্গলবার ছিল ব্যান্ডটির বার্ষিক ‘ফিসটা’ ডিনার। এরপরেরই ব্যান্ডটির অন্যতম সদস্য আরএম দেন বিচ্ছেদর ঘোষণা, ‘আমি সব সময়ই বিটিএসকে অন্য ব্যান্ডদের চেয়ে আলাদা ভেবেছি। কিন্তু কে-পপ ও পুরো ‘আইডল’ পদ্ধতির সমস্যা হলো এটা আপনাকে পরিণত হওয়ার সুযোগ দেবে না। আপনাকে গান চালিয়ে যেতে হবে এবং কিছু না কিছু করতে হবে।’

ব্যান্ডের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এক ভিডিও বার্তায় আরেক সদস্য সুগাও বলেন, ‘আমরা এখন আলাদা হয়ে যাব।’ মূলত ব্যান্ডের সদস্যের একক ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতেই এ সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়। বিটিএসের আরেক সদস্য জিমিন ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমাদের নতুন ভাবনা শুরু হলো। কী ধরনের শিল্পী হিসেবে ভক্তরা আমাদের মনের রাখব।’ বিটিএস-এর ভক্তরা নিজেদের ‘আর্মি’ নামে পরিচয় দেন। এত দিন ধরে সমর্থন জানানোর জন্য ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জিমিন আরও বলেন, ‘এখন আমাদের নিজেদের আত্মপরিচয় খুঁজতে হবে, যা ক্লান্তিকর ও দীর্ঘ এক প্রক্রিয়া।’

রেকর্ড-গড়ার-পর-ভেঙে-গেল-বিটিএস

ভক্তদের উদ্দেশে জে-হোপ বলেন, ‘আমরাদের এখন আলাদাভাবে সময় কাটাতে হবে। শিখতে হবে কীভাবে আমার একত্র হওয়া যায়। আশা করি আপনারা এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখবেন না, স্বাস্থ্যকর এক ব্যবস্থা হিসেবেই ভাববেন।’
এখন ভেঙে গেলে ভবিষ্যতে আবারও একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি ব্যান্ডটি। সুগা জানান, তাদের এই বিচ্ছেদ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যান্ড ভেঙে যাওয়া নয়। জাংকুক বলেন, ‘প্রতিজ্ঞা করছি নিশ্চিতভাবেই কখনো না কখনো আমরা এখনকার চেয়ে আরও পরিণত হয়ে ফিরে আসব।’

ব্যান্ডটির ভাঙন নিয়ে তাদের রেকর্ড কোম্পানির প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করেছে এএফপি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০১০ সালে সুগা, জে-হোপ, আরএম, জিমিন, জিন, ভি এবং জাংকুককে নিয়ে গড়ে ওঠে বিটিএস। দ্রুতই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। হয়ে ওঠে সারা দুনিয়ার তরুণদের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড। এ পর্যন্ত ৩২ মিলিয়নেরও বেশি অ্যালবামের কপি বিক্রি হয়েছে ব্যান্ডটির, যা কোরিয়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দুইবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসে মনোনয়ন পাওয়া ব্যান্ডটি ১২টি বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস, নয়টি আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড জিতেছে।

গান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমেও নিয়মিত ছিল বিটিএস। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাজ করেছে ‘লাভ মাইসেলফ’ কার্যক্রমে, যা ছিল মূলত সহিংসতাবিরোধী প্রচারণা। এ ছড়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনও তিনবার ভাষণ দিয়েছে বিটিএস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *