৩৬টি মিলের মধ্যে সচল ২টি, বিপন্নের পথে চাঁদপুরের লবণ শিল্প

স্টাফ রিপোর্টার
প্রাচীণ বাণিজ্যিক নগরী চাঁদপুর এক সময় পাট শিল্পের পাশাপাশি লবন শিল্পের জন্যেও বিখ্যাত ছিলো। সে সময় নদী বন্দর এ জেলার প্রধান ব্যবসায়ীক এলাকা পুরাণবাজারে ডাকাতিয়া নদীর তীরে গড়ে উঠে লবন মিল। প্রতিযোগতামূলক ভাবে গড়ে ওঠা লবন মিলে উৎপাদনও ছিলো বেশ। পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠেছিল ৩৬টি লবন মিল।
কিন্তু কালের পরিক্রমায় চাঁদপুরের সেই জৌলুসভরা লবণ শিল্প আজ অস্তিত্ব বিপন্নের পথে। একটা একটা করে বন্ধ হয়ে পড়ছে লবন মিলগুলো। সর্বশেষ চলতি বছর একজন মালিকের মৃত্যুজনিত কারণে ১টি লবণ মিল বন্ধ হয়ে বর্তমানে ২টি মাত্র লবন মিল সচল রয়েছে। এতে করে বেকার হয়ে পড়ছে এই এলাকার হাজার হাজার লবণ শ্রমিক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ধান, পাট, মরিচ, সরিষা, তিল, পেঁয়াজ, রসুন, মুগ, খেসারি, মশারি, গম, ভূট্টা, ছোলা, ডাল, আলু ও অন্যান্য সকল প্রকার রবি ফসল ও শাক-সবজি উৎপাদনকারী হিসেবে চাঁদপুর ইলিশের বাড়ি জেলা নামে চাঁদপুরের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। আর এ সব বেচা-কেনার প্রধান মোকাম এখনও চাঁদপুর পুরাণ বাজার। যার ফলে নদীপথে যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে পুরাণবাজারে একের পর এক গড়ে ওঠে লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। হাজার হাজার লবণ শ্রমিক দিন-রাত পালাক্রমে জীবন-জীবিকার জন্যে মিলগুলোতে কাজ করতো।
পুরাণবাজারের বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, ১৯৮০ সালের পর থেকে চাঁদপুরে প্রচন্ড নদীভাঙ্গন ও বন্যাসহ বেশ ক’টি প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়ার কারণে পুরাণ বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেয়। এরপর ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় লবণ মিলগুলোতে রক্ষিত কাঁচা লবণ ভেসে যাওয়ার কারণে মালিকরা অর্থনেতিকভাবে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হয় এবং ব্যাংক ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। ফলে একের পর এক লবন মিলগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯০-১৯৯১ সালে দেশের আয়োডিন জনিত অভাবের সমস্যা সমাধানে ইউনিসিফের সার্বিক সহায়তায় চাঁদপুরের ৩৬টি লবণ মিলের মধ্যে ২৫টি মিলে আয়োডাইজসড প্লান্ট বসানো হয়। যার প্রতিটির তৎকালীন মূল্য ছিল সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এর সাথে কর্মরত শ্রমিক, মালিক ও মিল ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণ ও ২০০০ সাল পর্যন্ত বিনামূল্যে আয়োডিন দেয়া হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *