অক্সিজেন, ঔষুধ ও চিকিৎসার অভাবে চাঁদপুরে করোনায় মৃত্যুর মিছিল

চাঁদপুরে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে অক্সিজেন, ঔষধ ও চিকিৎসার অভাবে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১০ জনই নারী। এরা সবাই চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ দিকে শুক্রবার (৬ আগস্ট) বন্ধের দিন ৩ শ’ ৭ জনের করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে ১ শ’ ৩০ জনের মধ্যে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। এতে আক্রান্তের হার ৪২. ৩৪ শতাংশ।
গতকাল শনিবার(৭আগস্ট) মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল।

মেডিক্যাল অফিসার জানান, যারা মারা গেছেন তাদের অক্সিজেনের মাত্রা একেবারেই কম ছিল। এছাড়া শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনার ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশী রোগী রয়েছে। ফলে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ১২ জনের মৃত্যুসহ চলতি মাসের শুরু থেকে গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত মাত্র ৬ দিনে ৮০ জন করোনা এবং উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে এই পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার। একই সঙ্গে করোনায় সব মিলিয়ে মারা গেছেন ১ শ ৯৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে আরো ৫ শতাধিক।

মূলত এখন যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে অক্সিজেন স্বল্পতায় দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল এবং সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়েও তাদের জীবন রক্ষা করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দাবি, করোনার মূমূর্ষ রোগীদের বাঁচাতে হলে জরুরিভিত্তিতে আইসিইউ চালু করা দরকার।

এমন পরিস্থিতিতে রোগীর স্বজনরাও ওয়ার্ডের পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তবে হাসপাতালের পরিবেশ ফিরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান, তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিব উল করিম।

তিনি জানান, প্রয়োজনীয় জনবলের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা কমীর সঙ্কট চলছে। পালাক্রমে মাত্র দুজন কর্মী গোটা হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরিভিত্তিতে আরো দুজন কর্মী অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

অন্যদিকে, সারাদেশের মতো গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে জেলার ১ শ ২০টি কেন্দ্রে একযোগে করোনার ভ্যাকসিন ‘গণটিকা’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলতে থাকা এই কর্মসূচীতে ৬১ হাজার ২ শ জনকে সিনোর্ফামের টিকা দেওয়ার হচ্ছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোজার ঈদের পর থেকে চাঁদপুরে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বিস্তার ঘটছে শুরু করে। তারপর থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে।

শনিবার করোনা ওয়ার্ডে যে ১২ জন মারা গেছেন তারা হলেন, চাঁদপুর সদরের মধ্য তরপুরচন্ডীর ফজিলাতুনেছা বেগম (৭০), লালপুরের আনোয়ারা বেগম(৬৫), দক্ষিণ বালিয়ার কুলসুমা বেগম(৫৫), কামরাঙার সাজেদা বেগম(৭০), চাঁদপুর পৌরসভার পূর্ব শ্রীরামদীর মর্জিনা বেগম(৩৫), ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাব্দেরগাঁও এলাকার লোকমান হোসেন(৬২), পশ্চিম রূপসার দেলোয়ার হোসেন (৪৫), মূলপাড়ার রেজিয়া বেগম(৯০), কচুয়া উপজেলার সাহিদাপুরের খালেদা খানম (৪৫), মতলব দক্ষিণ উপজেলার আড়ংবাজারের শেফালী বেগম (৬০) শাহরাস্তি সূচীপাড়ার আমেনা বেগম (৮০) এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার ধড্ডা গ্রামের জাহানারা বেগম (৬৫)। এদের মধ্যে ৫ জন করোনায় অন্যরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।

স্টাফ রিপোর্টার, ০৮ আগস্ট,২০২১;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *