মেঘনায় ১১ লাখ লিটার ডিজেল নিয়ে জাহাজ ডুবি

স্টাফ রিপোর্টার ভোলার মেঘনা নদীতে দুই কার্গো জাহাজের সংঘর্ষে তলা ফেটে ১১ লাখ লিটার ডিজেল নিয়ে ডুবে গেছে এসভি সাগর নন্দনি-২ নামে একটি জাহাজ। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কোস্টগার্ড ওই জাহাজের ১২ নাবিককে জীবিত উদ্ধার করেছে। জাহাজটির তলা ফেটে যাওয়ার ফলে ডিজেল মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল রোববার সকালে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের কাঠির মাথা এলাকার মেঘনায় এ ঘটনা ঘটে। ইলিশা নৌ-থানার ইনচার্জ মো. আকতার হোসেন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জাহাজের স্টাফরা দাবি করেন, জাহাজে প্রায় নয় কোটি টাকার তেল ছিল। জাহাজটি যখন ডুবছিল তখন আশপাশের কিছু জেলে এসে তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

ভোলা কোস্টগার্ড জানায়, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ডিজেল নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। রোববার সকালে কাঠির মাথা নামক এলাকার মেঘনা নদীতে নোঙর করা আরেকটি জাহাজের সঙ্গে ওই জাহাজটির সংঘর্ষ হয়। নদীতে ঘন কুয়াশা থাকার কারণে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মো. আকতার হোসেন জানান, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড ডিজেল অপসারণের চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনা কবলিত স্থানটিতে নৌ-পুলিশের কাজ চলমান রয়েছে।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির জানান, খবর পেয়ে পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশের একটি দল তেল অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজের তেল আনলোড করার জন্য জাহাজের মালিক কর্তৃপক্ষ অন্য একটি জাহাজ আনার চেষ্টা করছে। তবে অনেক তেল মেঘনার পানিতে ভেসে গেছে।
রোববার ভোর ৪টার দিকে উপজেলার কাঠিরমাথা এলাকার মেঘনা নদীতে ১১ লাখের বেশি লিটার তেল নিয়ে ‘সাগর নন্দিনী-২’ নামে জাহাজটি ডুবে যায়; এই তেলের মালিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড।

কোম্পানির বরিশাল ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. লোকমান বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিআইডব্লিউটিএ ডুবন্ত জাহাজটির উদ্ধার কাজ পরিচালনা করবে। এ জন্য খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারকারী নৌ-যান রওয়ানা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে।”
সোমবার সকাল থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি।

শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল লোড করে জাহাজটি চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার কথা ছিল। ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে তোলাতুলির কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি বলগেটের সঙ্গে জাহাজটির সংঘর্ষ হয়। এতে জাহাজটি তলা ফেটে পানি ঢুকতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেটি ডুবে যায়।

জাহাজে মোট ১৩ জন স্টাফ ছিলেন। পরে তাদের চিৎকার শুনে অন্য একটি বলগেট এসে তাদের উদ্ধার করে। জাহাজের স্টাফরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে স্থানীয় জেলেরা এসে জাহাজের তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কিছু তেল মেঘনায় ছড়িয়েও পড়ে।

এক ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর সকালে স্থানীয় জেলেরা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। তাদের প্রত্যেকের হাতে তেলের ছোট-বড় ড্রাম ও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ছিল। জাহাজ থেকে তেল ছোট ছোট পাত্র দিয়ে তুলে বড় ড্রাম ও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রাখা হয়। পরে সেগুলো ট্রলাতে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। এ সময় সেখানে কোলাহল হয়।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের বরিশালের ডিপো ব্যবস্থাপক মো. লোকমান আরও বলেন, “জাহাজে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন ছিলো। এর মধ্যে ডিজেল আট লাখ ৯৮ হাজার লিটার এবং দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন ছিলো।

“অজ্ঞাত বলগেটের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্যাংকার থেকে কিছু ডিজেল বের হয়েছিলো। কোস্ট গার্ডের সহায়তায় ডিজেল বের হওয়া বন্ধ করা হয়েছে।“

বর্তমানে অর্ধ-নিমজ্জিত জাহাজটির সার্বিক নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ডের দুটি দল কাজ করছে বলে জানান বাহিনীর দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা কে এম শাফিউল কিঞ্জল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *