‘গাংগে এহন মাছ নাই, আমরা শুধু তেল জ্বালাই আর খানা খাই,! এছাড়া আর কোন কাম নাই। নদীতে নাইম্মা মাছ না পাইলে বুকডা ধপ কইরা উডে। মনে হয় আংগো গেরামে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।’ কথাগুলো বললেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের জেলে বিল্লাল মাঝি।
তিনি আরো বলেন, নদীতে মাছ নেই। সারা দিন জাল ফেলে দুই-একটি করে মাছ জোটে। তা দিয়ে সংসার চলে না। তার উপর দাদনের দেনা শোধের দুঃচিন্তায়ও আছেন তিনি।
হাওর, নদী, নালা, খাল, বিল, পুকুর ও বিলুপ্ত প্রায় দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। নানা পদ্ধতিতে ধরা এসব মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি প্রজাতির শোল বোয়াল, শিং, মাগুর, কৈ, টাকি, আইড়, পুঁটি, ট্যাংরা, মেনি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ খুবই কম দেখা যাচ্ছে। কিছু থাকলেও তাও প্রচুর দাম।
মেঘনায় ও ডাকাতিয়া জেলেদের জালে আসানুরুপ রূপালী ইলিশ ধরা পড়ছেনা। ভরা মৌসুমেও মাছ ধরার এক একটি নৌকা নিয়ে ৮-১০ জন জেলে নদীতে গিয়ে ঘাটে ফিরছেন দু-চারটি ইলিশ নিয়ে। আবার কেউবা ফিরছে শুণ্যহাতে। ফলে দৈনন্দিন ব্যয়ের তুলনায় আয় না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে এখানকার হাজার হাজার জেলে পরিবার।
সরজমিনে কয়েকটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে , চাঁদপুর মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকার পুরানবাজার, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন, লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়ন, হানারচর ইউনিয়ন সহ হাইমচেরর শত শত জেলেরা নদীতে ইলিশ না থাকার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে সরকারের জাটকা নিধন কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলেরা এখন আর এধরনের কোন জাল নদীতে ফেলতে পারছে না। যার কারণে আয় রোজগার নেই বললেই চলে। কিছু কিছু জেলে আছে যারা দৈত্য পেশায় রয়েছে। সেইসব জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে কোনরকম দিনাতিপাত করলেও একমাত্র জেলে পেশার লোকেরা পড়েছেন দারুন বিপাকে। তারা এখন ধারকর্য করে এবং দাদন নিয়ে সংসার চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ হলো নদীতে ইলিশ পড়লে সব পরিশোধ করে দিবে। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে জেলেদের সেই আশায় গুড়েবালিই বলাচলে। কারণ এখন আর ভরা মওসুমেও নদীতে ইলিশ থাকে না। ফলে ঋনের বোঝা ভারিই হচ্ছে তাদের। তাছাড়া অন্যান্য মাছও পাওয়া যাচ্ছে না নদীতে। জেলেদের দাবী তারা এখন অসহায়।
এ সময় জেলেরা বাজারগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরে ছড়াছড়ি থাকার কথা। কিন্তু এবছর তা দেখা যাচ্ছে না। এবং ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অনেকে আবার এ পেশা ছেড়ে দিয়ে নতুন পেশাও খুঁজছেন।
জানাযায়, এ সময় জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে বাজারে উঠতেন। নদীতে নাই মাছ। প্রতিবছর এমন সময়ে জেলেরা দেশি প্রজাতির মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকতো কিন্তু এবার তার উল্টো চিত্র। মেঘনায় জেলেদের জালে শুধূ ইলিশই নয় অন্য মাছও আশানুরুপ ধরা না পড়ায় তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে এক ধরনের হাহাকার। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
তাছাড়া লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করতে না পারায় তারাও রয়েছেন চরম হতাশায়। তারা আরো জানান, বাজারে দেশি প্রজাতির মাছ না। আসলে কতদিন এ পেশা ধরে রাখতে পারবো জানিনা। পরিবার পরিজনদের মুখে দুমুঠো ভাত যোগাতে বাধ্য হয়ে নতুন পেশা খুঁজছেন তারা।
প্রতিবেদক: বাদশা ভূঁইয়া