লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তা সুসংহত করতে হবে

কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল : এমভি অভিযান লঞ্চটির পরিচালনায় থাকা শ্রমিকরা আগুন লাগার পর যাত্রীদের না বাঁচিয়ে পালিয়ে গেছেন, যা আইনেরও পরিপন্থি। নৌযানের যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বর্তমানে অনেক ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। অভিযান-১০ লঞ্চে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহারেও গাফিলতির তথ্য পাওয়া গেছে। লঞ্চটিতে আগুন লাগলে তা নেভাতে সব অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। কয়েকটি যন্ত্র অব্যবহৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

লঞ্চ ছাড়ার পর কিছু ত্রুটি ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে চলতে থাকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আগুন ধরা অবস্থায়ও লঞ্চটি কিছু সময় চালানো হয়েছে, যে কারণে আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে গিয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডকবলিত লঞ্চের বেঁচে যাওয়া একাধিক যাত্রীর মতে, আগুন ধরার পর লঞ্চটি নদীতীরে তাৎক্ষণিকভাবে ভেড়ানো হলে ক্ষয়ক্ষতি আরও কম হতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ইঞ্জিনের দায়িত্বে থাকা দুজন ইনচার্জ ড্রাইভার ও গ্রিজারের বক্তব্য পায়নি তদন্ত কমিটি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের উৎস সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি কমিটি। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ, লঞ্চের যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে কমিটি ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগার বিষয়টি জানতে পেরেছে।

দেশে কোনো নৌদুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশিত না হওয়ার বিষয়টি বহুল আলোচিত। এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তুলনামূলক কম সময়েই প্রতিবেদন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি ইতিবাচক। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, মানুষ এটাই দেখতে চায়।

এদিকে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার পর সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে সতর্ক হবেন, এটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবে তা লক্ষ করা যায়নি। যাত্রীবাহী লঞ্চের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি ঝটিকা অভিযান চালিয়েছিল নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। অভিযান পরিচালনার সময় সাতটি লঞ্চ পরিদর্শন করে সবকটিতে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি পাওয়া গেছে। সবকটির ইঞ্জিন রুমে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জ্বালানি তেল ছড়িয়ে ছিল। কয়েকটি লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র না থাকা, ধোঁয়া বের হওয়ার পাইপ ঠিক না থাকা, ইঞ্জিনের পাশে রান্নার চুলা রাখাসহ বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি পাওয়া গেছে। এসব কারণে সাত লঞ্চকে জরিমানাও করা হয়েছে। কাজেই যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরি বলে মনে করি আমরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *