চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌরসভার ঘুঘু শাল গ্রামের ভাস্কর্যশিল্পী সমীরণ দত্ত। গাছের শিকড় বা ফেলনা জিনিসপত্র দিয়ে নান্দনিক শিল্পকর্ম তৈরির কারিগর তিনি। কলমদানি থেকে শুরু করে ভাস্কর্য কিংবা বৈচিত্রময় নকশার ফার্নিচার সবই গড়েন পরম মমতা নিয়ে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে অর্ধসহস্রাধিক শিল্পকর্ম নিয়ে নিজ গ্রামে ৪৭ শতক ভাড়া জমিতে গড়ে তুলছেন আর্ট পার্ক ‘মনবাগান’। যেখানে প্রকৃতি মাঝে চালতা পাতার কারুকাজ, ফুলের সৌন্দর্য আর পাখির কলতানে ফুটে উঠেছে এক নৈসর্গিক আবহ।
এর মধ্যে রয়েছে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর্ট গ্যালারি, নৌকামঞ্চ। এ ছাড়া স্তূপীকৃত শিকড়ের সংগ্রহশালার মধ্যে গড়ে তুলেছেন মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ফ্রিডম হিল। ফ্রিডম হিলকে দেখলে মনে হয় স্যাটেলাইট বা ড্রোন ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি। যেখানে গাছগাছালির সবুজ-শ্যামলিমা, ঝরনা, পাখির কলতান কিংবা উপত্যকায় বিচিত্র প্রাণীদের ঘোরাফেরা সবই আছে। এখানে মিলন হয়েছে প্রকৃতি আর সৌন্দর্যের।
প্রায় ৫০ বর্গফুট জায়গায় মাটি, সিমেন্ট, কাঠ ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন এ শিল্পকর্ম। যেখানে পাহাড়কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা শহর থেকে বের হওয়া রাস্তা চলে গেছে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। জনপদ পেরিয়ে গহিন অরণ্যে। সেখানে রয়েছে হিংস্র জন্তু, রাস্তায় ছুটে চলা গাড়ি, বহুতল ভবন, পাহাড়ি বসতবাড়িসহ নান্দনিক সবুজের সমারোহ।
মনবাগানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসাইন রবিন বলেন, ‘আমরা জানতাম ভাস্কর সমীরণ দত্ত কাঠ ও শিকড়-বাকড় নিয়ে কাজ করেন। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ফ্রিডম হিল শিল্পী মনের এক অনন্য সৃষ্টি। এটি শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করবে।’
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সূচিপাড়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল কালাম বলেন, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ফ্রিডম হিল একটি অসাধারণ শিল্পকর্ম। ইতিমধ্যে সমীরণ দত্তের শিল্পকর্ম বেশ সাড়া জুগিয়েছে। তিনি ফেলনা বস্তুকে শিল্পের রূপদান করেছেন।
ভাস্কর্য শিল্পী সমীরণ দত্ত বলেন, ‘যাঁরা জীবনবাজি রেখে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন তাঁদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ। একজন মহান বীরের নামে নিজ হাতে গড়া শিল্পকর্মের নামকরণ করতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করছি। বিজয়ের মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই শিল্পকর্মটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
শাহরাস্তি প্রতিনিধি