সঙ্কটসময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব !

কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল

করোনা মহামারির এই সঙ্কটসময়ে দেশের মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত। নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতি, কর্ম হারানো, সুযোগ কমে আসাসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে জনগণকে। এই অবস্থার মধ্যে খবর এসেছে, দেশের গ্যাস বিতরণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খাতভেদে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বা তারও বেশি হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

প্রস্তাব অনুসারে বাসাবাড়ির এক চুলার মাসিক বিল হবে দুই হাজার টাকা, যা বর্তমানে ৯২৫ টাকা। দুই চুলার মাসিক বিল হবে দুই হাজার ১০০ টাকা, যা বর্তমানে ৯৭৫ টাকা। এছাড়া আবাসিকে মিটারযুক্ত গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের গ্যাস দাম বর্তমানে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। তা বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৩৮ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়ছে যথাক্রমে ১১৬ দশমিক ২২, ১১৫ দশমিক ৩৮ ও ১১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর শিল্প ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৫ পয়সা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৭ টাকা চার পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ টাকা দুই পয়সা এবং ক্যাপটিভে (শিল্পকারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহ্নত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সার স্থলে ৩০ টাকা ৯ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

বিতরণকারী কো¤পানিগুলোর মধ্যে তিতাস, বাখরাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কো¤পানি গত সপ্তাহে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) পৃথকভাবে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। অন্য কো¤পানিগুলো চলতি সপ্তাহে তাদের প্রস্তাব জমা দেবে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ।

গত অর্থবছর বিতরণকারী ছয় কো¤পানি মোট মুনাফা করে প্রায় এক হাজার ১৮১ কোটি টাকা। তারপরেও কেন ও কী পরিস্থিতিতে এই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব? তা কিন্তু পরিষ্কার নয়।

অর্থবছরে বড় অঙ্কের মুনাফা করেছে প্রতিটি গ্যাস বিতরণকারী কো¤পানি। এর মধ্যে কর্ণফুলী গ্যাস কো¤পানি ৩৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, তিতাস গ্যাস ৩৪৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, জালালাবাদ গ্যাস কো¤পানি ১৮৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, বাখরাবাদ গ্যাস ১৪৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কো¤পানি ৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা ও সুন্দরবন গ্যাস
কো¤পানি ৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এরপরও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়াতে সামাজিক মাধ্যমসহ জনমনে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
প্রতি ঘনমিটার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি খরচ, মুসক, অগ্রিম আয়কর, ফিন্যান্সিং চার্জ, ব্যাংক চার্জ, কমিশন, রি-গ্যাসফিকেশন চার্জ, ভোক্তা পর্যায়ে উৎসে কর সব মিলিয়ে বাড়তি মূল্য বিতরণ কো¤পানির ওপরে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যে কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম না বাড়িয়ে বিকল্প উপায় দেখছে না বলে উল্লেখ
করা হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন সময় বিতরণ কো¤পানিগুলোর মধ্যে থাকা দুর্নীতি ও অব্যবস্থার চিত্র দেখতে পাই গণমাধ্যমে। দেখা যায়, ওইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বিভিন্নজনের শত-হাজার কোটি টাকার অবৈধ উৎস বের হবার খবর।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয়, আর জনগণের মাসিক খরচ। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে হলেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে দেশের বাণিজ্যের-শিল্পের চাকা সচল রাখা যায়। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে দাম বৃদ্ধি হলেও গ্যাস সরবরাহ না বাড়ায় শিল্প উৎপাদনের গতি ধীর এবং অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর ভোক্তা
পর্যায়ে দাম বাড়ায় জনগণের খরচ বাড়ার পাশাপাশি জনমনে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। পাশাপাশি গ্যাসের দাম বাড়ার অজুহাতে নানা অপ্রাসঙ্গিক মূল্য বৃদ্ধি হয়।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত গতবছর থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের চলমান সঙ্কটগুলোকে মাথায় রেখে এই দামবৃদ্ধি থেকে সরে আসা উচিত বলে আমরা মনে করি। বরং ওইসব কো¤পানিগুলোর মধ্যে থাকা দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা সহ স¤পদের সঠিক ব্যবহার করে কীভাবে ভর্তূকির চাপ কমানো যায়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা চিন্তা করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *