শোয়াইব (আ.) তাঁর সমাজে অর্থনৈতিক সংস্কারের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর নীতিকথায় সমাজপতিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা বলতে থাকেন, বৈধভাবে ব্যবসা করলে আমরা মুনাফা অর্জন করব কিভাবে? আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কিভাবে চলবে, যদি আমরা সততার অনুসরণ করি?
শোয়াইব (আ.)-এর জাতির কিছু মানুষ পথে চৌকি বসিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক টোল আদায় করত। অন্যের অর্থ-সম্পদ লুট করত। নিরপরাধ মানুষ খুন করত। তারা বলত, আমরা যদি বাণিজ্য কাফেলাগুলোকে বেকায়দায় ফেলা বন্ধ করে দিই, তাহলে আমরা যেসব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করছি, তা বন্ধ হয়ে যাবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু শোয়াইব (আ.)-এর জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সব যুগেই পথভ্রষ্ট লোকেরা সততা ও বিশ্বস্ততার ব্যাপারে এ ধরনের মানসিকতা পোষণ করেছে। সব যুগের দুনিয়াদারদের ধারণা হলো, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি ও বৈষয়িক কর্মকাণ্ড দুর্নীতি ছাড়া ‘উন্নতি’ করতে পারে না। এটাই কথিত পুঁজিবাদী চিন্তাধারা। পুঁজিপতিদের ধারণা হলো, আমার হস্তগত সম্পদে আমারই একচ্ছত্র অধিকার। কাজেই তাতে আমি যা ইচ্ছা তা-ই করব। এতে কারো বাধা দেওয়ার সাধ্য নেই।
পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থা ও ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান আছে। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার মূলকথা হলো, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের উপার্জিত সম্পদের মালিক। তার সম্পদে অন্য কারো কোনো অংশ থাকবে না। অধিকারও থাকবে না। এ ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। তা যেকোনো উপায় হতে পারে, যেকোনো পরিমাণ হতে পারে। ঠিক তেমনি তা ব্যয় করারও কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। পক্ষান্তরে ইসলামের দৃষ্টিতে সুন্দর এই পৃথিবীর সব কিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলা। তাই সম্পদের ক্ষেত্রে ইসলামের বক্তব্য হলো, সম্পদের মূল মালিক আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা থেকে তোমরা আহার করো আর আল্লাহর জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)
তবে মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। সে হিসেবে মানুষকে সম্পদ সাময়িক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই সম্পদ উপার্জন করতে হবে আল্লাহর সন্তোষজনক উপায়ে আবার তা ব্যয়ও করতে হবে তাঁর নির্দেশিত পথে। এভাবে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে মানুষ যেকোনো পরিমাণ সম্পদ উপার্জন করতে পারে আবার তা ব্যয়ও করতে পারে। তবে তা কুক্ষিগত করে রাখা যাবে না, বরং সমাজের মানুষের উপকারে তা ব্যয় করতে হবে অথবা বিনিয়োগের মাধ্যমে এর প্রবাহ সমাজে চলমান রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দাও, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করো, তা হবে মাতা-পিতার জন্য, আত্মীয়-আপনজনের জন্য, এতিম-অনাথদের জন্য, অসহায়দের জন্য ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যেকোনো সৎকাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালোভাবেই আল্লাহর জানা আছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৫)
অনলাইন ডেস্ক, ৩০ আগস্ট ২০২১;