৫ বছর ধরে অচল চাঁদপুর অরুন নন্দী সুইমিংপুল

চাঁদপুর জেলার একমাত্র সুইমিং পুলটি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুরে ১৪ বছর আগে সুইমিং পুল নির্মাণ করা হয়েছিল। যার নাম দেওয়া হয় অরুন নন্দী সুইমিং পুল । ২০০৮ সালে উদ্বোধন ৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয় সুইমিং পুলটি। উদ্বোধনের কয়েকবছর সচল থাকলেও বর্তমানে তা সম্পূর্ণ ভাবে অচল। দীর্ঘদিন ধরে সুইমিং পুলের পানির মেশিনটি নষ্ঠ। এছাড়া পুলের ভবনি জরাজীর্ণ। সুইমিং পুলে পানি না থাকায় শুকিয়ে নষ্ঠ হয়ে গেছে টাইলস। ভিতরে যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অরুন নন্দী সুইমিং পুলটি দীর্ঘদিন অযন্তে-অবহেলায় পড়ে থাকায় চরম ক্ষুব্ধ ক্রীড়া সংগঠকরা। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ক্রীড়া সংগঠন ও খেলোয়াড়রা। সুইমিং পুলটিতে জাতীয় মানের সাঁতারু তৈরি তো দূরে থাক, খেলোয়াড়দের শারীরিক গঠনে যে স্বপ থেকে সুইমিং পুল নির্মাণের দাবি ছিল তা স্বপ্নই থেকে গেছে। তাই যে উদ্দেশ্যে চাঁদপুরে সুইমিং পুল নির্মাণ করা হয়েছে তা যেন বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত সংস্কার করে চালুর দাবি ক্রীড়া সংগঠকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরে মানসম্পন্ন সাতারু সৃষ্টি এবং শিশু-কিশোরদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে সুইমিং পুল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুলের জন্য স্থান নির্বাচন করে। সেখানে ২০০৭ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইমিং পুলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যার পরবর্তী কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে। সুইমিং পুলটি উদ্বোধন করা হয় ওই বছরের ০৩ ফেব্রুয়ারি। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্যালন পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সুইমিং পুলটি। শুরু থেকে সুইমিং পুলটিতে প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা বন্ধ হয় যায়। সুইমিং পুলটির জন্য সেখানে নিজস্ব পানির মেশিন বসা হয়, যা বর্তমানে বিকল। এছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার কাছে ২৪ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকায় রয়েছে। যে কারনে পানির মেশিনটির বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শুধু তাই নয় সুইমিং পুলটি পুনরায় চালু করতে প্রয়োজন নতুন পানির মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম।
ফুটবল খেলোয়াড় মো. মাসুম বেপারী ও বলিবল খেলোয়ার নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে অরুন নন্দী সুইমিং পুল নির্মাণ করা হয়েছে। খুব সুন্দর একটি স্থানে নির্মাণ কাজ হয়েছে। কিন্তু বড় বিষয় হচ্ছে যে কারনে সুইমিং পুল নির্মাণ করা হল, তার কোন বাস্তবায়ন নেই। বছরের পর বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখানে হয়না কোন প্রতিযোগিতা, হয়না প্রশিক্ষণ। এখনকার অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা চাই দ্রুত সংস্কার করে আমাদের ছেলে মেয়েদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তাহলে তারা সাঁতার শিখতে পারবে এবং প্রতিযোগিতায়ও অংশ গ্রহন করতে পারবে।
অরুন নন্দী সুইমিং পুলের সাঁতার প্রশিক্ষনার্থী আব্দুল আহাদ খান রাহুল ও তরুন ইসলাম তামিম বলেন, আমরা এক সময় এখানে সাঁতার শিখতে আসতাম। কিন্তু হঠাৎ করেই সুইমিং পুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যার কারনে আমরা সাঁতার শিখতে পারছি না। সুইমিং পুলের ভিতরে পানি নেই, নেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ভিতরে অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। অরুন নন্দী সুইমিং পুলের ভিতর এবং বাইরে ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আমাদের ছোট ভাই-বোনদেরও এখানে এনে সাঁতার শিখাতে পারছি না। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই সুইমিং পুল দ্রুত সচল করা হোক।
চাঁদপুর ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বাদল বলেন, চাঁদপুর জেলাটি নদীমাতৃক জেলা। কিন্তু চাঁদপুরের অনেক ছেলে মেয়েরা সাঁতার জানেনা। আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণ করা হলেও তার কোন কার্যক্রম নেই। সুইমিং পুলটি বছরের পর বছর ধরে বেহাল পড়ে আছে। খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠকদের দাবি সরকারের নজরদারিতে এই পুল, তথা চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গণকেও চাঙা করা হোক। দু:খের সাথে বলতে হয়, সুইমিং পুলটি দায়িত্বহীনতার কারনে জরাজীর্ণ হয়ে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখন পুরো কার্যক্রম বন্ধ বললেই চলে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, যাতে সুইমিং পুলটি সংস্কার করে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হয়।
চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, অরুন নন্দী সুইমিং পুলটি বিভিন্ন কারনে বন্ধ রয়েছে। আমরা ইতিমেধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। আর জেলা প্রশাসক মহোদয় এলজিইডির ও গণসাংস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে কথা বলেছেন। তারা সুইমিং পুলটি সচল করতে নতুন করে একটি পানির মেশিন বসানোর চিন্তা করছেন। মেশিনসহ সুইমিং পুলের বিভিন্ন ট্রুটির কারনে আপাতত কার্যক্রম বন্ধ। তবে আমরা খুব দ্রুত অরুন নন্দী সুইমিং পুলের কার্যক্রম সচল করার ব্যবস্থা করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।

স্টাফ রিপোর্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *