চাঁদপুরে ১৩ দিনে ১১ জনের প্রাণহানি, আর কত প্রাণ যাবে সড়কে

সম্প্রতি চাঁদপুর জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা যেন সিরিয়াল কিলিং এ পরিনত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চাঁদপুর কোননা কোন সড়কে প্রাণ যাচ্ছে পথচারী কিংবা যাত্রীর। বিশেষ করে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে চলেছে। গত ১৩ দিনে চাঁদপুরে প্রায় ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে এই সড়কে।

গত ২০ নভেম্বর শনিবার রাত ১১টার দিকে চাঁদপুর কুমিল্লা মহাসড়কের কচুয়া উপজেলার কাজুরিয়া বাজারে বালুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হন।

গত ২৩ নভেম্বর মহামায়া উাচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে রাত সাড়ে নয়টার সময় এক মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২ এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ২৫ নভেম্বর কচুয়া গৌরিপুর বিশ্বরোড়ে বিআরটিসি বাস চাপায় সিএনজিতে থাকা ৩ জন কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

একই দিনে অটোরিকশার ধাক্কায় আহত হওয়ার পর ২৯ শাহরাস্তির নাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা ফাতেমা তুজ জোহরা মৃত্যুবরণ করেন।

২৬ নভেম্বর শাহরাস্তিতে অপর দুর্ঘটনায় ৫ জন আহত হয়। এর মধ্যে কয়েক জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের ভাগ্যে কি হয়েছে তা জানা যায়নি।

গতকাল ৩ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জের ধেররায় নিহত হয় ৩ মোটর সাইকেল আরোহী। । নিহতরা হলেন, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বেলাস্বর গ্রামের সোহাগ (২৬), সুজন (৩০) ও মনির হোসেন (৩০)।

নিহতদের সহপাঠী রবিউল ইসলাম জানায়, তারা ছয় মিলে বন্ধু কুমিল্লার চানিন্দা উপজেলা থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে চাঁদপুরে একটি বিনোদন পার্কে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এসময় তারা হাজীগঞ্জ ধেররা এলাকায় ভাইয়া সুপার মার্কেটের সামনে এলে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আস বোগদাদ বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ৬ বন্ধুর মধ্যে তিন জন ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে।

এই ঘটনার পর পর সড়কের দুই দিকে শতাধিক গাড়ি আটকা পড়ে। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন নিহতদের লাশ উদ্ধার করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

এদিকে মােটরসাইকেলটি চাপা দিয়ে বোগদাদ চালক বাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা বাসটিকে ধাওয়া করে। পরে বাসটি হাজীগঞ্জ বাজারে এলে পুলিশ বাসটিকে জব্দ করে। তবে এ সময় বাসের চালক পালিয়ে যায়।

থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মােহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহত ৩ জনের সুরতহাল রিপাের্ট শেষে লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরবর্তীতে মরদেহ ময়নাতদন্তসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। এটা বারবার বলা হচ্ছে, সচেতনতা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সম্ভবত যাদের সচেতনতার কথা বলা হচ্ছে, তাদের কান পর্যন্ত এ কথা পৌঁচছে না। তারা কথা শোনার কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না।

অপ্রিয় হলেও সত্যি, সচেতনতা সৃষ্টিতে যে যার সার্বক্ষণিক ভূমিকা রাখার প্রয়োজন, সেই পুলিশ বাহিনী বিশেষ সময় ছাড়া অসচেতনই থাকছে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। গত শনিবারের দুর্ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের একজনকে জনতা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশী ভাষ্যমতে, অন্যজনকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, দুর্ঘটনার পর দু’একদিন এনিয়ে কথাবার্তা হলেও কিছুদিন পর সবকিছু চাপা পড়ে যায়। এর ফলে এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধ হবার পরিবর্তে বেড়েই যাচ্ছে। দ্রুতবিচার ও উপযুক্ত শাস্তির সড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থার অবসান প্রয়োজন। অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও উদাহরণযোগ্য সাজার ব্যবস্থা করা জরুরি। সাথে সাথে পথচারীদেরও সতর্ক হতে হবে। সড়ককে মৃত্যু ফাঁদ থেকে রক্ষায় সংশ্লিøষ্টরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন, এটাই কাম্য।

স্টাফ করেসপন্ডেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *