হরিনা ফেরিঘাটে যানবাহনের দীর্ঘজট

ফরিদুল ইসলাম গত বেশ কিছুদিন ধরে যানবাহনের দীর্ঘ জটে স্থবির হয়ে পড়েছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসের হরিনা ফেরিঘাট এলাকা। যানবাহনের অধিক চাপের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ। ৭টি ফেরি দিন-রাত পারাপারে ব্যস্ত থাকলেও যানবাহনের অধিক চাপের কারণে প্রতিদিনই প্রায় ৫ শতাধিক জানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এসব যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ১-৩ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

গতকাল ০১ জানুয়ারী শনিবার দুপুরে হরিনা ফেরিঘাটের কাউন্টার কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম চাঁদপুর সময়কে জানান, মাওয়া ফেরিচলাচল বন্ধ থাকার কারণে হরিনা ফেরিঘাটে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসে ৭টি ফেরি রয়েছে। এই অল্প ফেরি দিয়ে এতো অধিক যানবাহন পারাপার কঠিন হয়ে পড়েছে।

ফেরির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি ফেরিতে ৭টি মালবাহি গাড়ী অথবা বাস এবং ৭টি ছোট প্রাইভেট বা মাইক্রো পারাপার করা যায়। আরো বড় ফেরি হলে যানবাহন আরো বেশি নেয়া যেতো। এতে জটলা অনেকটা কমানো যেতো। মূলতঃ ফেরি সংকটের কারণে এবং প্রতি মূহুর্তে যানবাহন বাড়তে থাকার কারণে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।

তবে মালবাহী ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের জলটার সৃষ্টি হওয়ার পেছনে আরো একটি কারণ হলো যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করতে হয়। তাই পণ্যবাহী যানবাহনের জটলা আরো দীর্ঘ হতে থাকে।

গত দুই দিন হরিনা ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায় যানবাহনের পাকিং স্পট তথা পুরো মাঠ যানবাহনে ঠাসা। যানবাহনের এতো অধিক চাপ এর আগে কখনো দেখা যায়নি বলে জানান, ফেরিঘাটের হোটেল ব্যাবসায়ী মালেক গাজী। তিনি বলেন, মাঠ এবং রাস্তাঘাট এখন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে পরিপূর্ণ। ফেরিগুলো বিরামহীনভাবে পারাপারে ব্যস্ত থাকলেও শেষ করতে পারছে না।
এদিকে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালকদের সাথে আলাপ করলে জানান, মাওয়া ফেরিঘাট বন্ধ থাকার কারণে এই ঘাটে চাপ বেড়েছে। যার কারণে আমাদের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর থেকে উত্তোরণে পথ একটাই সেটা হলো ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসে ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি না করলে এই জটলা শেষ হবে না। আর এতে পণ্যবাহী যানবাহনগুলো ক্ষতির মূখে পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মধ্যে অনেক পরিবণ আছে যেগুলোতে কাঁচামাল রয়েছে। এসব যানবাহনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার না হতে না পারলে পঁচে শেষ হয়ে যাবে। তবে ফেরির সংখ্যা না বাড়ালে জটিলতা আরো বাড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ফেরিসার্ভিসে নতুন করে আরে কয়েকটি ফেরি যুক্ত করা দরকার বলে মনে করছেন অধিকাংশ পণ্যবাহী গাড়ীর চালকরা।

গতকাল হরিনা ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঘাট থেকে শুরু করে হরিনা বাজার পার হয়ে জব্বর ঢালির দোকান ছাড়িয়ে প্রায় চান্দ্রা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানবাহনগুলো দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পারাপারের অপেক্ষ করছে। এসময় চালকদের মাঝে আতঙ্ক দেখতে পাওয়া যায়।

তাছাড়া ঐ এলাকায় পর্যাপ্ত খাবার হোটেল না থাকার কারণে খাওয়া-দাওয়াতেও বিপত্তিতে পড়ছে যাত্রী সাধারণ। অপরদিকে সেখানে নেই কোন আবাসন ব্যাবস্থা। যার কারণে রাত্রি যাপনেও চালদের দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে এলাকার ব্যবসায়ী আ. সাত্তারা এর সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, বেশ কিছু দিন থেকে ফেরিঘাটে যানবাহন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে এখন মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না।

বড় বড় যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে। এতো অধিক যানবাহনের জটলা সৃষ্টি হলেও এসবের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। তাই এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নজর দেয়ার জন্য আহবান জানাই।

এদিকে অস্বাভাবিক ভাবে যানবাহন বেড়ে যাওয়ার কারণে এলাকার অধিকাংশ জিনিসপত্রের দাম অধিক মূলে বেচাকেনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে হোটেল ব্যবসায়ীদের অবস্থা পোয়াবারো। তাদের বেচাকেনার ধুম চলছে। তবে দাম রাখার ব্যাপারের যাত্রিদের অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী আকবর হোসেন জানান, আমরা কোন কিছুর দামই বাড়িয়ে নেই না। সব কিছু আগের দামেই রয়েছে। তবে বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সরবরাহে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

এলাকাবাসী মনেকরেন হরিনা ফেরিঘাট যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফেরিঘাটে পরিনত হয়েছে তাই এখানের উন্নয়ন এবং ফেরির সংখ্যা বাড়ানো জরুরী। ফেরি বাড়নো না হলে পণ্যবাহী পরিবহন ও যাত্রীদেরকে দারুন দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন উদ্যোগ নিলে সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।

এদিকে ফেরি ঘাটের ইজাদার কর্মচারী জানান, বর্তমানে যানবাহন বেড়ে যাওয়ার কারণে ফেরি পারাপারে বিলম্ব হচ্ছে। ফেরির সংখ্যা বাড়ালে এই সমস্যা আর থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *