সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ফরিদগঞ্জের র‌্যামিটেন্স যোদ্ধার মৃত্যু

বাবা-মা ও বোনদের স্বপ্ন পূরণের জন্য দুই বছর পূর্বে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন নূরনবী। চেষ্টা করছিলেন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয়রোজগার করে স্বাবলম্বী হবেন এবং সাবলীলভাবে চলাফেরা করার ব্যবস্থা গড়বেন। এই সুন্দর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো একটি দুর্ঘটনা। যে দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো নূরনবীর প্রাণ। বাড়িতে ঢোকার মুহূর্তেই মা ছখিনা বেগমের বিলাপ শুনতে পাওয়া যায়। একমাত্র ছেলে হারানোর ব্যথা দরদি মা-ই জানেন। বুকফাটা আর্তনাদ করছেন দুই বোন এবং আত্মীয়-স্বজনরা। যে আর্তনাদের ভাষা বুঝতে পারা দায়। তাদের কান্নার সঙ্গী রাতের অন্ধকার আরও যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন হলো।

১০ জানুয়ারি সোমবার রাত সাড়ে দশটায় নিহত প্রবাসী নূরনবীর বাড়ি ফরিদগঞ্জের গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চির্কা ছৈয়াল বাড়িতে সরেজমিনে গেলে এমন দৃশ্যই গোচর হয়। চির্কা ছৈয়াল বাড়ির কুয়েত প্রবাসী মো. দুলাল ছৈয়ালের একমাত্র পুত্র মো. নূরনবী শাকিল (২৫) সৌদি আরবের আবা শহরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে ৯ জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশী সময় রাত ১০টায়।

জানা যায়, দুই বছর পূর্বে সৌদি আরবে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া মো. নূরনবী শাকিল ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে ছুটিতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। সে মোতাবেক সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছিল নূরনবী। ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কেনাকাটার জন্য মার্কেটে বেরিয়েছিলেন দুই বন্ধুসহ। মা বলেছিলেন জয়তুনের তেল আনতে। মায়ের জন্য জয়তুনের তেল ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য শপিংয়ে বের হয়েছিলেন। রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় অনেকদূর ছিটকে পড়েন নূরনবী। তাৎক্ষণিক তার সঙ্গে থাকা অন্য দুই বন্ধু তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আইসিউতে ভর্তি করানো হয় শেষপর্যন্ত। কিন্তু সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূরনবী। সঙ্গে থাকা প্রবাসী বন্ধুদের মাধ্যমে জানা যায়, সৌদি আরবের ওয়ান ওয়ের রাস্তা ফাঁকা দেখে নূরনবী দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে। এতে করে সে মাথায়, নাকে-মুখে প্রচণ্ড আঘাত পায় এবং একটি পা থেঁতলে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণে নূরনবীর মৃত্যু হয়েছে। অবস্থা খারাপ দেখে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছিল, কিন্তু আমরা পারলাম না আমাদের বন্ধুকে বাঁচাতে।

নূরনবীর মা ছখিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘রবিবার রাত তিনটার দিকে সৌদি আরব থেকে আমাদেরকে জানানো হয় আমার নূরনবী অসুস্থ, তার জন্য দোয়া করতে। তখনই আমার মনটা কেঁদে ওঠে। আমি আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, পারিনি। আমি বুঝতে পেরেছি আমার ছেলে বোধহয় আর নাই গো, ও আল্লাহ গো। আমার ছেলে বাড়িতে আসবে, কতকিছু কেনাকাটা করল। এখন আমি এসব দিয়ে কী করব গো। আমি আমার ছেলেরে চাই গো, আমি জিনিসপত্র কিছু চাই না গো।’
কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত নূরনবীর লাশ বাংলাদেশে আনা হবে বলে পরিবারের সূত্রে জানা গেছে।

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *